স্বদেশ ডেস্ক:
এবার পাউডার আকারে আসবে করোনার টিকা। ইতোমধ্যে সুইডিশ একটি কোম্পানি করোনা টিকার ‘পাউডার ফর্ম’ তৈরির চেষ্টা করছে। অন্য দিকে আমেরিকার কোম্পানি মার্কসের ‘করোনা পিল’ যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে কোনো ওষুধের অনুমোদন দেয়া হলে বাংলাদেশও দেশটিকে অনুসরণ করে। সে কারণে বাংলাদেশও করোনা পিলের অনুমোদনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করলে দেশে টিকাকরণ আরো এগিয়ে যাবে। অপর দিকে যাদের সুই ভীতি রয়েছে তারা করোনা টিকার পিলও (ক্যাপসুল আকারের) গ্রহণ করতে পারবেন।
যারা করোনা ভ্যাকসিনকে পাউডার ফর্মে নিতে চেষ্টা করছেন তারা বলছেন, অনেক দরিদ্র দেশ আছে যাদের করোনার টিকা মজুদ করে রাখার মতো ‘স্ট্রোরেজ’ নেই তাদের জন্য পাউডার ফর্মের টিকা কাজে আসবে। পাউডার ফর্মের টিকার মজুদ করে রাখতে খুব উন্নত মানের টেকনোলজির প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজ করে রাখারও প্রয়োজন হবে না। ফলে করোনা টিকার ক্ষেত্রে সমতা তৈরি হবে।
সুইডিশ কোম্পানি জিকাম বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত করোনা টিকার পাউডারকরণের কাজ করছে। এই কোম্পানি ২০১৭ সাল থেকে শিশুদের টিকার পাউডার করে আসছে। জিকাম জনসন অ্যান্ড জনসনের সহযোগিতায় পাউডার ফর্মের টিকা বানাতে চেষ্টা করছে। জিকাম কোম্পানির প্রধান নির্বাহী গোরান কনরাড জিকাম ‘ইউরো নিউজ নেক্সট’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ভ্যাকসিনের খুবই প্রয়োজন কিন্তু ভ্যাকসিনটি সমবণ্টন হচ্ছে না। তিনি বলেন, এয়ার ড্রাইড ফরমোলেশনে যে ভ্যাকসিন আসবে তা যেমন দামে কম হবে, পরিবহন করতে সহজ হবে তেমনি অনেক ব্যয়ের কোল্ডস্টোরেজ বা রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হবে না। দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা কম। পাউডার আকারের ভ্যাকসিন এই সমস্যার সমাধান করবে। ফলে দরিদ্র দেশগুলো করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘বিশ্বের একজন মানুষও যদি ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে থাকে কেউ নিরাপদ নয়।’ কিন্তু এই বছর বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার মতো ভ্যাকসিন উৎপাদন হলেও অধিকাংশ ভ্যাকসিন ধনী দেশগুলো মজুদ করে রেখেছে। এ পর্যন্ত নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মাত্র ৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এয়ার ড্রাইড টেকনোলজি এ সমস্যার সমাধান করবে। জিকাম কোম্পানির এই টেকনোলজি দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে। জিকাম কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কনরাডসন বলেন, তারা সবগুলো পরীক্ষা এখনো করেননি। তবে তারা আশা করছেন পাউডার আকারের করোনা ভ্যাকসিন খুবই কাজ করবে এবং এটা উৎপাদনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ব্যবহার করা যাবে। কনরাডসন বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিনের এই পাউডার ইনহেলারের মতো নেয়া যাবে। এক সময় এটা ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যাবে। অ্যান্টি ভ্যাকসার বা ভ্যাকসিন বিরোধীদের এই করোনার ট্যাবলেটকে আকৃষ্ট করবে। কারণ অ্যান্টি ভ্যাকসারদের অনেকেই সুইকে ভয় পান।
অন্য দিকে ইউরোপে গত বছরের ডিসেম্বরের বড়দিনের ছুটিতে করোনা বেশ জেঁকে বসেছিল। এবারের ডিসেম্বরেও বিশেষজ্ঞরা করোনা মহামারীর আশঙ্কা করছেন। এবারো ইউরোপ হতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের এপিসেন্টার বা কেন্দ্র। অতএব, সেখানে অ্যান্টি ভেকসারদের (টিকাবিরোধী) বিরুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ১৮ লাখ নতুন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. হ্যান্স ক্লুজ বলেন, একই সময়ে ইউরোপে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার মানুষ। গত এক সপ্তাহে বৈশ্বিক করোনা শনাক্তের ৫৯ শতাংশই ইউরোপে শনাক্ত হয়েছে এবং করোনায় মৃতদের অর্ধেকই ইউরোপে মারা গেছে ওই একই সপ্তাহে। ইউরোপে জার্মানির ৭০ শতাংশ অধিবাসীকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গত ৩ নভেম্বর এক দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৪৯ জন। ইতালির ৭২ শতাংশ অধিবাসীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে কিন্তু দেশটিতে গত এক সপ্তাহে ১৬.৬ শতাংশ করোনা শনাক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউরোপ-আমেরিকার ঘটনা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অনেক কিছু রয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে করোনা না বাড়লেও আগামী ডিসেম্বরে যে বাড়বে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে মাস্ক ব্যবহার কমে গেছে। গতকাল শুক্রবার মসজিদগুলোতে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষ নামাজ পড়তে এসেছেন মাস্ক পরা ছাড়াই। এ ছাড়া রাস্তায় চলাচল করলে দেখা যায়, মাস্ক পরে বের হয়েছেন এমন পথচারীর সংখ্যা কমে গেছে।